অধ্যাপক রায়হান উদ্দিন

মনের স্বাধীনতা হলো সংস্কৃতি। কোন জাতির বা গোষ্ঠির সংস্কৃতি বলতে এজন্য তার সামগ্রিক , আর্থিক জীবন থেকে শুরু করে ললিতকলা, শিল্পকলা পর্যন্ত সবদিক বুঝায়। এ সংজ্ঞায় বলা যায়, বাঙালীর ঐতিহ্য মন্ডিত সাংস্কৃতিক বলয়ে কক্সবাজার স্বকীয় বৈশিষ্টে উজ্জ্বল , যদিওবা এর স্বীকৃতি নিজস্ব সীমারেখা ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে একটু ভিন্ন দৃস্টিকোন থেকে বিবেচনা করার অবকাশ আছে। যদিওবা আমরা জানি সংস্কৃতির অনেক বেড় আছে। ব্যাখ্যা আছে। কারন বাঙ্গালীর সংস্কৃতির সাথে এখানকার রাখাইন সম্প্রদায়ের নিজস্ব সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারও মিশে আছে।

বৃটিশ আমলে বাঙালীর নিজস্ব সাংস্কৃতিক কর্মতৎপরতা ছিল শাসক কুলের শ্যানদৃস্টির কবলে রুদ্ধ। অপ সংস্কৃতির জোয়ার এসময়ে প্রবলভাবে বয়ে যায়। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত ককসবাজারে সাংস্কৃতিক অঙ্গন চাঙ্গা ছিল। এ সময়ে যাঁরা এ অঙ্গনে পদচারনা করে ছিলেন তারা হচ্ছেন, শ্রী মনোমোহন সেন, জনাব বজলুর রহিম, শ্রী দেব প্রসাদ ভট্টাচার্য, জনাব ওয়াহিদুল আলম, জনাব মকবুঃল আহমদ নাজির, জনাব বজল আহমেদ, জনাব মোজাম্মেল হক চৌধুরী, এডভোকেট ফনীন্দ্র লাল চৌধুরী, এডভোকেট্ সুরেশ চন্দ্র সেন, শ্রী বিশ্বেস্বর ভট্টাচার্যৃ ও আরও অনেকে। উল্রেখিত সময় পাবলিক লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদক পদে নিযুক্ত ছিলেন এডভোকেট জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তি। সেই সময়ে মহকুমা প্রশাসক জনাব আবুল খায়ের সাহেবের পৃস্টপোষকতায় কাছারী পাহাড় প্রাঙ্গনে প্রথম নাটক “মহারাজ নন্দকুমার” মঞ্চস্থ হয়।এতে অংশ নিয়েছিলেন শ্রী দেব প্রসাদ ভট্টাচার্যৃ, শ্রী প্রভোদ কুমার রক্ষিত, নিরোদ বরণ চক্রবর্তি. জনাব বজল আহমেদ, জনাব ওবাইদুল হাকিম, বাবু অমরেন্দ্র নাথ মজুমদার, জনাব নজিবর রহমান, এডভোকেট নলিনী দত্ত প্রমুখ।

অভিনয়ে এ সময়কালো মনিকাঞ্চন, আওরঙ্গজেব , কংকাবতীর ঘাট, মেঘে ঢাকা তারা প্রভৃতি নাটক মঞ্চস্থ হয়। ১৯৪৯ সালেই সাস্কৃতিক অঙ্গনে ওস্তাদ স. ম. আবুবকর ছিদ্দিকী শরিক হন।এর পর ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যৃন্ত ককসবাজারের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল মহকুমা প্রশাসক জনাব এ কে এম জাকারিয়ার পৃষ্টপোষকতায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। তাঁর পৃষ্টপোষকতায় স্থানীয় পাবলীক হল মঞ্চে নাটক “টিপু সুলতান’ মঞ্চস্থ হয়। এতে চরিত্রাভিনয়ে অংশ নিয়েছিলেন জনাব ফরিদ আহাম্মদ, শ্রী দেব প্রসাদ ভট্টাচার্যৃ, জনা্ব নজিবর রহমান , জনাব ওবাইদুল হাকিম,(যিনি খাদ্য অফিসে চাকরী করতেন)জনাব ওবাইদুল হাকিম, জনাব বজল আহামেদ, বাবু নিরোদ বরণ চক্রবর্তী,জনাব মকবুল আহাম্মদ নাজির,বাবু অমরেন্দ্রনা্থ মজুমদার, জনাব আবুদল হাকিম, বাবু প্রবোদ কুমার রক্ষিত,বাবু মনোতোষ কুমার চৌধুরী,ও বাবু এডভোকেট সুরেশ চন্দ্র সেন। এ সময়ে সিরাজদ্দৌল্লাহ, সিরাজের স্বপ্ন, চন্দ্রগুপ্ত (স্কুলে অনুস্ঠিত) মারচেন্ট অব ভেনিস(স্কুলে অনুস্ঠিত)মীর কাসেম জাহাঙ্গীর, শাহজাহান , বিশবছর আগে ইত্যাদি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল।বিশ বছর আগে নাটকে অংশ নিয়েছিলেন আমাদের শ্রদ্ধেয় এডভোকেট শ্রী জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তি। এ সমস্থ নাটকের সাথে ওস্তাদ স.ম আবুবকর ছিদ্দিকী সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯ ৫৬ সালে মার্চে ককসবাজার ইনস্টিটিউট কাম পাবলিক লাইব্রেরীর সহযোগী প্রতিষ্টান হিসেবে‘সঙ্গীত সমিতি’ নামে একটি সংগীত প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়েছিল।ককসবাজারের তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এ কে এম জাকারিয়া এবং এস ডি এম/সিও জনাব এন রহমান প্রতিষ্টানের সম্পাদক ছিলেন। এ সময়ে ককসবাজার পৌর এলাকাধীন টেকপাড়ায় নাট্যানুষ্টান সাংস্কুতিক অনুষ্ঠানের ধুম পড়ে যায়। নাইলী মজনু, মহুয়া, সিন্দু বিজয়, সোহরাবরুস্তম, প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়নের পেছনে সমস্থ কর্মভার পালন করেন খাদ্য অফিসের তৎকালীন মুদ্রাক্ষরিক জনাব মো:ওবাইদুল হাকিম। তাছাড়া ড: কবির আহাম্মদ, মফিজ, জাফর , মঞ্জুর, গোলাম নবী, পেঠান আলী, ডা: সেলিম রাহগির,এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ আলী, নেজামুল হক, সিরাজুল মোস্তফা, শওকত, কাশেম, কালা মিয়া(যিনি পাবলিক রিলেশান অফিসে কাজ করতেন) গোলাম কিবরিয়া, উক্ত নাটক সমুহে অভিনয় করতেন। এ সময়কালে পল্লী কবি জসিমউদ্দিন নজরুল সঙ্গীত শিল্পী জনাব সোহরাব হোসেনকে নিয়ে ককসবাজার এসেছিলেন।সন্ধার পর তারা পাবলিক লাইব্রেরীতে গান গেয়েছিলেন। এ সময়েই বিশিষ্ট সংগীত বিশারদ ওস্তাদ জগদানন্দ বড়ুয়া রামু হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে আসেন। তাঁকে নিয়ে প্রায় সময় এখানে ঘরোয়া আসর বসতো। সে সময়ে করাচীর কেয়ামারি ফুট্ববল দলের সম্মানার্থে পাবলিক লাইব্রেরীতে এক মনোজ্ঞ সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর কিছুদিন পরেই পাবলিক লাইব্রেরীর সাহার্য্যার্থে যে শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন হয় এবং কয়েকটি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল তা পরবর্তিতে পাবলিক হলে মঞ্চায়ন হতে থাকে।

আলোকচিত্র শিল্পী পলস স্টুডিওর সত্বাধীকারি শ্রি দুলাল পাল পাবলিক লাইব্রেরীতে অনেক নাটক পরিচালনা করেন। ১৯৫৮ সালে বিখ্যাত শিল্পী ফেরদৌসী রহমান তার ভাই মোস্তফা জামান আব্বাসীকে নজরুল জন্মবার্ষিকীতে আনা হয়েছিল।১৯৬০ সালে ককসবাজারে একমাত্র সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান “সঙ্গীতায়তন” প্রতিষ্ঠিত হয়।বাবু মনোমোহন সেন ও জনা্ব নুরুল হুদা চৌধুরী ছিলেন সংগঠনের প্রথম সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক। এ সময়ে বর্তমান প্রেস ক্লাবের পাশে তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যান আবুদুস সালামের ভাড়া বাসায় “সঙ্গীতায়তনের” অনুশীলন শুরু হয়েছিল।১৯৬৩ সালে ঘুর্নীঝড়ে ভাড়া ঘরটি ভেঙ্গে গেলে বর্তমান অবস্থানে সঙ্গীতায়তন চালু হয়।এই প্রতিষ্টানের ছাত্র সুখ্যাত শিল্পী বাবু মিহির লালা, ধর্মৃদর্শি বড়ুয়া, রাযহান উদ্দিন, দোলন চাঁপা চৌধুরী।জনাব এইচ রশিদ মহকুমা প্রশাসক থাকাকালে ককসবাজার পাবলিক লাইব্রেরী নির্মান কাজ সম্পুর্নৃ হয়।১৯৬৭-৬৮ সালে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক জনাব শাহেদ লতিফের প্রচেস্টায় পাবলিক লাইব্রেরীর বর্তৃমান পাঠাগার নির্মিত হয়েছিল।

স্বাথীনতা উত্তরকালে ককসবাজারের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তরুণদের উদ্যম, প্রাণচাঞ্চল্যে মুখর হয়ে উঠে। ককসবাজারের সাংস্কৃতিক কর্মতৎপরতা প্রাণকেন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরী হল হয়ে উঠে প্রানবন্ত।এ সময়ে তরুনদের সমন্বয়ে গঠিত হয় “পিনাক” শিল্পীগোষ্ঠি। এর পর একে একে সংগঠনের সংখ্যা বেড়েই চলে।গঠিত হয় ঝংকার শিল্পী গোস্ঠি, ঝিনুক শিল্পী গোষ্ঠি, ব্যতিক্রম ধর্মী না্ট্য সংস্থা এক পা সামনে, সমকাল নাট্য ও সাহিত্য সম্প্রদায়, পুর্বাচল সপ্তরুপা নাট্য সম্প্রদায়। তবে এর মধ্যে ক্ষনজন্মা সংগঠনের সংখ্যাই বেশী। এ সব সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের যাঁরা কর্মী ও পৃষ্টপোষক ছিলেন তাঁরা হচ্ছেন মুফিদুল আলম, অধ্যাপক সোমেশ্বর চক্রবর্তী, অধ্যাপক মনজুরুল হক হেলাল,অধ্যঅপক সিরাজুল মোস্তফা, এডভোকেট্ আবুলকালাম আজাদ,দুলাল পাল, আবদুল হাকিম, এডভোকেট পিযুষ, নুরুল আবছার, নুরুল মোক্তাদির, রায়হান উদ্দিন, আতাহার ইকবাল, করিম উদ্দিন ইউছুপ, মোহাম্মদ শামশুল হুদা, শাহজাহান, দিলীপ বাবু, বেলাল, প্রিয়তোষ পাল পিন্টু, প্রদীপ চৌধুরী, হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, রনজন পাল, ইসমাইল মার্শাল, বিশ্বজিত সেন, আশীষ ধর, এ কে ফরিদ আহাম্মদ, জসিম উদ্দিন, সানাউল্লাহ, তোফায়েল আহাম্মদ, খোরশে আলম, আবুল কালাম, শহীদ চৌধুরী, আবু হায়দার উসমানী, বাবুল পাল,সমিরন চক্রবর্তী, অমিত চৌধুরী, ইলঅ চৌধুরী, দোলন চাঁপা, পুতুল , মীলা পাল, হোসনে আরা স্বপ্না, তপতি পাল, মনিকা বড়ুয়া, খালেদা বিলকিস বানু, শাহানা, যমুনা পাল, ফাতেমা নুরী আক্তার, উষা ভট্টাচার্যৃ,রিকা বড়ুয়া,শিবা্নী ধর, পুরবী বড়ুয়া , করবী বড়ুয়া, শিরিন জাহান, শিল্পী ধর, সুলেখা বড়ুয়া, ইরা দাস,দিলিপ চৌধুরী,করবী বড়ুয়া,শুক্লাধর, মো: ফারুক, বেলাল উদ্দিন,গোপা সেন,উল্লেখ যোগ্য। প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।

এর সাথে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে প্রতিস্ঠিত শিল্পকলা পরিষদ ককসবাজার জেলা শাখা সাংস্কৃতিক কর্মৃধারা বিকাশে ভুমিকা পালন করছে । এছাড়া ককসবাজার জেলার অন্যান্য উপজেলা গুলোও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে লালিত। এর মধ্যে রামু হচ্ছে সবচে অগ্রনী ভুমিকায়। রামুর না্ট্যাঙ্গনে সেকালের উল্লেযোগ্য ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন বাবু ধীরেন বড়ুয়া, দীনেশ বড়ুয়া, জাকের আহমদ চৌধুরী, ওসমান সরওয়ার আলম চৌধূরী, ওবায়দুল হক, ও নুরূল ইসলাম বাচ্চু। সে সময়কালে বাবু রায়মোহন বড়ুয়ার নের্তৃত্বে এক নাট্য চক্র গঠিত হয়েছিল। এতে সিরাজদ্দৌল্লা, টিপু সুলতান, হায়দর আলী, সোনার বাংলা, বেহাই মশাই, মাস্টার মশাই, কালরাত্রি,নিস্কৃতি, বিন্দুর ছেলে, প্রভৃতি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল।সঙ্গীতে বিমল বড়ুয়া,বিনয় বড়ুয়া, ধীনেশ বড়ুয়া, কাকের আহমদ চৌধুরী, এরা সুনাম অর্জৃন করেন। এর সাথে দুর্বার শিল্পী গোষ্ঠী এবং সোলো শিল্পী গোষ্ঠী উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রেখেছিল।

ককসবাজারে তখন বেশ কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মী বেতার ও দুরদর্শনে তাঁদের াপ্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। এদের মধ্যে ওস্তাদ মিহির লালা চৌধুরী, ধর্মৃদর্শি বড়ুয়া, মীনা বড়ুয়া, রায়হান উদ্দিন,দীল মোহাম্মদ ও আহাম্মদ কবির আজাদ অন্যতম।